কোমর ব্যথা এবং এর প্রতিকার - Low back pain and it's management

low-back-pain

কোমর ব্যথা এবং এর প্রতিকার - Low back pain and it's management

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বড় এক সমস্যার নাম Low back pain  বা কোমর ব্যাথা। এমন মানুষ হয়ত পৃথিবীতে পাবেন না যিনি তার জীবনে একবারও কোমরে ব্যথা বা Low back pain অনুভব করেননি। কোমরের মাংস পেশি, মেরুদন্ডে বা মেরুদণ্ডের নিচের হাড়ের মধ্যবর্তী তরুণাস্থি বা ভার্টিব্রাল ডিস্কের আঘাত, কোমরে ইনফ্লামেশন বা ইনফেকশন অথবা বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনের ফলে Low back pain  বা কোমর ব্যাথা এর সুত্রপাত হয়।

 ভাল থাকুন ডট কম  (ValoThakun.Com) এর আজকের লেখা  কোমর ব্যথা এবং এর প্রতিকার - Low back pain and it's management নিয়ে

Causes of Low back pain  বা কোমর ব্যথার কারণ

সাধারণত কোমরে বা পিঠের মাংসপেশি বা মেরুদন্ডের সাথে সংযুক্ত লিগামেন্টে আঘাত পেলে বা তা আংশিক ছিড়ে গেলে, দুই কশেরুকার মাঝে অবস্থিত ডিস্কে সমস্যা হলে, অথবা আঘাত জনিত কারণে কশেরুকার অবস্থান পরিবর্তনের ফলে Low back pain  বা  কোমর ব্যথা হয়ে থাকে।

চলাফেরার সময় অসতর্কতা, চলাফেরার সময় বা বসে থাকার সময় কোমরের সঠিক পোশ্চার (অবস্থান) না মানা, ভারি জিনিশ উপরে তোলা, মেরুদন্ডের অতিরিক্ত নড়াচড়া, মেরুদন্ডে আঘাত পাওয়া ইত্যাদি নানান কারণে Low back pain  বা  কোমর ব্যথা হতে পারে। 

অন্যান্য কারণের মধ্যে বার্ধ্যক্যের জন্য মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয় বা বৃদ্ধি, অস্টিওআথ্র্যাটিস বা গেঁটে বাত, এনকাইলজিং স্পনডাইলাইটিস, অস্টিওপোরেসিস, মেরুদণ্ডের স্নায়ুবিক সমস্যা, মেরুদন্ডের হাড়ে ক্যান্সার, টিউমারবোন টিবি, কোমরের মাংসপেশীতে সমস্যা, বিভন্ন পেটে অবস্থিত ভিসেরার রোগ বা ইনফেকশন, বিভিন্ন স্ত্রীরোগজনিত রোগ, মেরুদণ্ডের রক্তবাহী নালিতে সমস্যা, অপুষ্টি, অতিরিক্ত মেদ বা ভুড়ি, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি।

Symptoms of Low back pain  বা  কোমর ব্যথা -এর লক্ষণ

Low back pain  বা  কোমর ব্যথা অনেক দিন সময় নিয়ে ধিরে ধিরে বাড়তে পারে অথবা হঠাৎ করেই কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে। কোমরের নড়াচড়া বা দৈনন্দিন কাজ করার সময় তীব্র ব্যাথা অনুভূত হতে পারে। ব্যথা শুধুমাত্র কোমরে থাকতে পারে বা কোমর থেকে পায়ের দিকে নামতে পারে। অনেক সময় Low back pain  বা  কোমর ব্যথা 'র কারণে পুরো মেরুদণ্ডে ব্যাথা অনুভূত হয়। এমনকি মাথা ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। Low back pain  বা  কোমর ব্যথা 'র রোগী লম্বা সময় একটানা বসতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ব্যথার সাথে সাথে পায়ে শিন-শিন বা ঝিন-ঝিন জাতীয় বিশেষ অনুভূতি হতে পারে। এছাড়া হাঁটার সময় পা খিচে আসতে পারে অথবা আটকে যেতে পারে। ব্যথা দুই পায়ে অথবা যেকোন এক পায়ে অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিলে থাকলে, ব্যথা কিছুটা কমে আসে। এভাবে অনেক দিন চলতে থাকলে রোগীর কোমর ও পায়ের মাংসপেশীর শক্তি কমে আসে এবং মাংস পেশীগুলো আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেতে পারে এবং একটা সময় রোগী চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

আধুনা এই যুগেও, কোমর ব্যথা, অনেক বড় একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানের জন্য প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।

 ভাল থাকুন ডট কম  (ValoThakun.Com) এর আজকের লেখা  কোমর ব্যথা এবং এর প্রতিকার - Low back pain and it's management নিয়ে


কোমর ব্যথার প্রতিকার Low back pain management

দৈনন্দিন কাজে সতর্কতা: 

দৈনন্দিন কাজগুলো একটু সচেতন ভাবে করলে কোমর ব্যাথা থেকে অনেকােংশে মুক্তি পাওয়া যায়। ঔষধ গ্রহনের আগে আমাদের উৎচিৎ নিচের কাজ গুলো সাবধানে করা-

নিচ থেকে কিছু তোলার সময়-

     -কোমর ভাঁজ করে কিংবা ঝুঁকে তুলবেন না। হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন।

কোনো কিছু বহন করার সময়

     -ঘাড়ের ওপর কিছু তুলবেন না।

     -ভারি জিনিস শরীরের কাছাকাছি রাখুন।

     -পিঠে ভারি কিছু বহন করার সময় কিছুটা সামনে ঝুঁকে বহন করুন

শোয়ার সময়

     -উপুড় হয়ে শোবেন না। ভাঙ্গা খাট, ফোম বা স্প্রিংয়ের খাটে শোবেন না।

     -সমান তোশক ব্যবহার করুন।

     -বিছানা কিছুটা শক্ত, চওড়া ও সমান পাটাতনের হতে

দাঁড়িয়ে থাকার সময়

     -১০ মিনিটের বেশি একটানা দাঁড়িয়ে থাকবেন না।

     -সামনের দিকে ঝুঁকার সময় হাঁটু কিছুটা ভেঙ্গে নিবেন।

     -দীর্ঘক্ষণ হাঁটার সময় বা দাঁড়ানোর সময় উঁচু হিলের জুতা পরবেন না।

     -অনেকক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে থাকতে হলে কিছুক্ষণ পর পর শরীরের ওজন এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন।

     -দীর্ঘক্ষণ যদি দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তবে ছোট আকারের ফুট রেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।

বসে থাকার সময়

     -আপনার চেয়ার-টেবিলের দূরত্ব বেশি না রেখে পরিমিত রাখুন।

     -সামনে ঝুঁকে কাজ না করাই ভাল।

  • প্রয়োজনে কোমরের পেছনে সাপোর্ট ব্যবহার করুন।।

     -এমনভাবে বসার চেষ্টা করুন যাতে ঊরু মাটির সমান্তরালে থাকে।

     -নরম গদি অথবা স্প্রিংযুক্ত সোফাত বা চেয়ারে না বসাই উত্তম।

যানবাহনে চড়ার সময়

     -গাড়ি ড্রাইভ করার সময় স্টিয়ারিং হুইল থেকে বেশি দূরে সরে বসবেন না। সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করবেন।

     -লম্বা ভ্রমণে কোমর ব্যথার সময় লাম্বার-করসেট ব্যবহার করতে পারেন।


Low back pain  বা  কোমর ব্যথা খুব বেশি হলে বিছানায় শোয়া ও বিছানা থেকে ওঠার নিয়ম

  • প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে একটি হাঁটু ভাঁজ করুন।
  • এবার অন্য হাটুটি ভাঁজ করুন। হাত দুটি বিছানায় রেখে ধীরে ধীরে এক পাশ কাত হোন।
  • পা দু’টি বিছানার ধার ঝুলিয়ে দির, এরপর কাত হওয়া দিকের হাতের কনুই এবং অন্য হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে আস্তে আস্তে উঠে বসুন।
  • এরপর দুই হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে বসুন এবং মেঝেতে পা’দুটি রাখুন।
  • এবার দুই হাতের তালুতে ভর দিয়ে অল্প একটু সামনে ঝুঁকে আস্তে উঠে দাঁড়ান।

  ভাল থাকুন ডট কম  (ValoThakun.Com) এর আজকের লেখা  কোমর ব্যথা এবং এর প্রতিকার - Low back pain and it's management নিয়ে


Low back pain  বা  কোমর ব্যথা 'য় মেয়েরা যেসব নিয়মকানুন মেনে চলবেন

     -অল্প বা ফ্ল্যাট হিলের জুতো বা স্যান্ডেল ব্যবহার করুন। বিভিন্ন জুতোর হিলের উচ্চতা একই রাখার চেষ্টা করুন।

     - দৈনন্দিন কাজ যেমন- তরকারি কাটা, মসলা বাটা, কাপড় ধোয়া ও ঘর মোছার সময় মেরুদ- স্বাভাবিক অবস্থায় এবং কোমর অবশ্যই সোজা রাখুন।

     -কোমর ঝুঁকে ভাড়ি কছিু তুলবেন না এবং বাচ্চাকে কোলে নেবেন না। ঝাড়ু দেয়া বা টিউবওয়েল চাপার সময় কোমর সোজা রাখবেন।

     -শপিংমলে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ১০ - ১৫ মিনিট দাঁড়ানো বা হাঁটার পরে বিশ্রামের জন্য একটু বসার চেষ্টা করবেন।।

   

ওজন কমানখাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন

গরু ওখাসির মাংস, ডালজাতীয় খাবার, মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার, বিভিন্ন রকমের তৈলাক্ত খাবার খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে শাকসবজি ওফলমূল খাদ্য তালিকায় যতটা পারেন বেশি করে রাখুন। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করুন এবং যাদের দুপুরে খাবার পর ঘুমানোর অভ্যাস আছে, তা দ্রূত বন্ধ করুন।

 

এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শম অনুযায়ী নিতে পারেন-

ফার্মাকোথেরাপি বা ঔষধ :- Low back pain  বা  কোমর ব্যথা 'র রোগীকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর, অন্য কোন রোগ না থাকলে, একজন চিকিৎসক রোগীকে সাধারণত ব্যথানাশক এনএসএআইডিএস গ্রুপের ঔষধ, মাসল রিলাক্সজেন্ট ও সিডেটিভ জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন।

ফিজিওথেরাপি :- Low back pain  বা  কোমর ব্যথা-জনিত সমস্যার জন্য সবচেয়ে ভাল চিকিৎসা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি। এই চিকিৎসাব্যবস্থায় রোগীকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন, লাম্বার ট্রাকশন শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, অতিলোহিত রশ্মি, ইনফারেড রেডিয়েশন, ইন্টারফেরেনশিয়াল থেরাপি, ট্রান্স কিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক নার্ভ ইস্টিমুলেটর, ইলেকট্রিক নার্ভ ও মাসেল ইস্টিমুলেটর, অটো মেনুয়াল ট্রাকশন, লেজার থেরাপি, হাইড্রোথেরাপি, ও বিভিন্ন রকম ব্যায়াম করানো হয়।

সার্জারি :- যদি অনেকদিন ফার্মাকোথেরাপি এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পরিচালানার পরও রোগীর অবস্থার যদি পরিবর্তন না হয় রোগীকে অবস্থা অনুযায়ী কোমর-মেরুদন্ডের অপারেশন বা সার্জারির করনোর লাগতে পারে। সার্জারির পরে সুস্থ হলে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো নির্দিষ্ট ব্যায়াম বা ফিজিও থ্যারাপি দীর্ঘ দিন চালিয়ে যেতে হয়।

আশা করি উপরের নিয়মগুলো মানলে Low back pain  বা  কোমর ব্যথা হতে অনেকটাই মুক্ত পাওয়া যাবে। তবু বেশি ব্যাথা অনুভূত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

--------------------------------------------

আরো পড়ুন ভাল থাকুন ডট কম (ValoThakun.Com) - এর পোস্ট:

অ্যালজাইমার্স : বয়স্কদের ভুলে যাওয়া রোগ -  Alzheimer's : Memory Problems In Elderly

Vitamin A and Night Blindness : ভিটামিন এ ও রাতকানা রোগ

 

---------------------------------------------- 

ডা. হাসান ইবনে আমিন


মন্তব্যসমূহ